অভিমানে বিগলিত চাঁদ : সিরাজুন নাহার সাথীর জীবন ও প্রেম দর্শন
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম
সিরাজুন নাহার সাথী। কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও তিনি কবিতা ও উপন্যাস দুটোতেই বেশ সাবলিল। এ পর্যন্ত পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ ও ছয়টি উপন্যাস বেরিয়েছে তাঁর। “অভিমানে বিগলিত চাঁদ” তাঁর ষষ্ঠ উপন্যাস। নিজেকে তেমন প্রকাশ করতে না চাওয়া, নিজের ভেতরে মগ্ন থাকা তাঁর স্বভাব। এ দিক থেকে তিনি একজন নিভৃতচারী এবং কল্পনাবিলাসী লেখকও বটে। তাঁর মুখে প্রায় শুনি “সুন্দর আমাকে ভাবায়, জাগায়, নিয়ে যায় কল্পনালোকে। আমি লিখি সুন্দরকে ভালোবেসে।” সিরাজুন নাহার সাথী এ ক্ষেত্রে বেশ একজন ব্যতিক্রমী লেখক।
শব্দ দিয়ে শিল্প হয়। তবে সেটা শুধু কবিতার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখেন না অনেকেই। গদ্যের মাঝেও তাই প্রকৃত শব্দশিল্পী শব্দ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। ঔপন্যাসিক সিরাজুন নাহার সাথীর উপন্যাস “অভিমানে বিগলিত চাঁদ” তেমন শিল্পে বহুমাত্রিক বিষয় নিয়ে উপস্থাপিত। তাঁর দেশপ্রেমের চেতনা বেশ করে প্রকাশ পেয়েছে উপন্যাসে। আর মানবপ্রেমের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, সমসাময়িক রাজনীতি, সংস্কার, সংস্কৃতি এবং সামাজিকতার ঘটনাকে স্পর্শ করে গেছেন তিনি। যদি বলি তিনি তাঁর উপন্যাসে ব্যক্তি জীবনের অংশ বিশেষের আশ্রয় নিয়েছেন তবে ঔপন্যাসিকের স্বার্থকতা এখানেই যে, হোক না তাঁর ব্যক্তি জীবন, সেটা সমাজের প্রতিটি মানুষের জীবন ছুঁয়ে গেছে বোধ করি।
‘সাহিত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি’ বলেই সিরাজুন নাহার সাথী জীবনকে অবলম্বন করেছেন তাঁর কাহিনিতে। জীবন নিয়েই তো সবাই লিখে থাকেন। তাহলে সে প্রসঙ্গ এখানে টেনে আনছি কেন? প্রসঙ্গটা টেনে আনার পেছনে কারণ হলো জীবনকে সবাই লিখনিতে আনতে পারলেও অনেকের উপস্থাপনায় সাহিত্যমূল্যের উপস্থিতি বা অনুপোস্থিতির একটা বিষয় থেকে যায়। সিরাজুন নাহার সাথীর উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ অবধি জীবনের উপস্থাপন হয়েছে সাহিত্যের আদলে।
কখনো পুরনো স্মৃতিকে মনের ভেতর লালন করে সাজানো জীবনের সুখকে উপলব্ধি করার পেছনে সিরাজুন নাহার সাথী আশাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী তাও প্রমাণ করতে পেরেছেন। সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, চাওয়া, না পাওয়া কিংবা পাওয়া নিয়েই জীবন। প্রেমকে আধার করে অপ্রাপ্তিকে স্পর্শ করে জীবনের মিলনাত্বক বা ইতিবাচক দিকটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। সুস্থধারার প্রেমকে অবলম্বন করে সমাজ জীবনের প্রতিবন্ধকতা ও ঘাত-প্রতিঘাতের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার। আপন মানুষ থেকে নিজের কাজের যতটুকু মূল্যায়নের আশা করা যায় ততটুকু না পেলেও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে না গিয়ে স্বাধীন শক্তিতে জীবন সাজানোর চেষ্টা করেছেন। “অভিমানে বিগলিত চাঁদ” উপন্যাসে প্রাসঙ্গিকভাবে জীবনের এমন কিছু বিষয় তিনি উপস্থাপন করেছেন যা পাঠকের নিজের জীবনের কাহিনি মনে হবে বিশ্বাস করি।
যেকোনো রচনায় পাঠকের চাহিদা এবং আকাঙ্খা ধরে রাখতে পারা লেখকের বড় একটি স্বার্থকতা। আর উপন্যাসের ক্ষেত্রে তো সেটা বেশি অনিবার্য। কাহিনি বর্ণনায় পাঠকের তৃষ্ণা মেটানোর বেলায় তিনি বিভিন্ন পর্বে পাঠকের সে আকাঙ্খা ধরে রাখেত পেরেছেন। একটি অধ্যায় পড়া শেষ হলে আরেকটির প্রতি পাঠকের আগ্রহ জন্মাতে উপন্যাসে নাটকীয়তা রয়েছে বেশ।
“অভিমানে বিগলিত চাঁদ” উপন্যাসটি যেভাবে উৎসর্গ করা হয়েছে তার মধ্যেও নতুনত্ব রয়েছে। “আইডিয়া প্রকাশন” থেকে প্রকাশক মাসুদ রানা সাকিল মার্চ ২০২১ এ প্রকাশ করেছেন এই উপন্যাস। সাকিল মাসুদ এর সুন্দর প্রচ্ছদের এ উপন্যাসটির মূল্য ৩০০ টাকা। পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি “অভিমানে বিগলিত চাঁদ”র।